ঢাকায় ১২ই নভেম্বর একটি বাসে আগুন দেয়ার পর নেভানোর চেষ্টা চলছে


সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং গ্রেফতার নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৫ই নভেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর সকাল ছয়টা পর্যন্ত আরেক দফা সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

সোমবার বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। গত ১৫ দিনে এটি বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর ডাকা পঞ্চম দফার অবরোধ হতে যাচ্ছে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা সড়ক-রেল-নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ চলবে।
এদিকে, সোমবার বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিন চলছে। বিকেল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার কোথাও কোন সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিন যান চলাচলও বেশ স্বাভাবিক ছিল বলে জানা যাচ্ছে।

সারা দেশে বিভাগীয় শহরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সেখানে তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। দুয়েকটি স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল ছাড়া আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

তবে সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিভাগীয় শহরগুলোরে বিভিন্ন স্থানে উপস্থিতি দেখা গেছে। সেই সাথে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে।

গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি।


'যদি কিছু ঘটে যায়, সেই ভয়ে স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি'

বিএনপির ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ এবং একে ঘিরে নানা সহিংস ঘটনার কারণে আতঙ্কে থাকেন বলে জানিয়েছেন স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।

সোমবার বিবিসিকে তাদের কয়েকজন বলেছেন, সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে এখন বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছেন তারা।

রাজধানীর মুগদা এলাকার একটি স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক অভিভাবক জানান, স্কুল থেকে তার বাসা কাছেই। আগে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে বাসায় চলে যেতেন তিনি।

কিন্তু অবরোধের কারণে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে ছুটি না হওয়া পর্যন্ত বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।

ওই অভিভাবক বলেন, “যদি কিছু ঘটে তাহলে তো ওরা কিছু করতে পারবে না, আমার বাসা থেকে আসতেও সময় লাগবে। যদি কিছু ঘটে যায়, সেই ভয়ে স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। বাসায় আর যাই না।”

স্কুলটির বাইরে থাকা আরেক অভিভাবক জানান, এর আগে তার সন্তানকে তার স্ত্রী স্কুলে পৌঁছে দেয়া এবং তাদের আবার নিয়ে যাওয়ার কাজটি করতেন।

তবে অবরোধের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির আশঙ্কায় এখন আর স্ত্রীকে সন্তানদের পৌঁছে দিতে দেন না তিনি। বরং নিজেরই সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যান এবং তাদের ছুটি না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করেন।

তিনি বলেন, “ওর মা আসলে, যদি কিছু ঘটে তাহলে তো সামলাতে পারবে না। তাই আমিই আসি এখন।”
নভেম্বর মাস হওয়ার কারণে স্কুলগুলোতে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা চলছে। তাই অবরোধ হলেও স্কুলে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।


        নভেম্বর মাস হওয়ার কারণে স্কুলগুলোতে বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষা চলছে।


সারা দেশে অবরোধ যেভাবে হচ্ছে

বিভাগীয় শহরগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সেখানে তেমন কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। দুয়েকটি স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল ছাড়া আর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

বরিশালের স্থানীয় সাংবাদিক আকতার ফারুক শাহিন বলেন, সোমবার সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের দুটি ঝটিকা মিছিল ছাড়া আর কোন কার্যক্রম ছিল না। তবে এসব মিছিলও খুব অল্প সময় ধরে হয়েছে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেগুলো শেষ হয়েছে।

শহরের ভেতরে যান চলাচল মোটামুটি স্বাভাবিকই রয়েছে। আন্তঃজেলা যান চলাচল যাত্রীর অভাবে খুব বেশি হচ্ছে না। যাত্রীর অভাবে দূর পাল্লার পরিবহনও খুব একটা ছাড়তে দেখা যায়নি।

মি. শাহিন বলেন, নৌবন্দরে কোস্টগার্ড টহল দিচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেই সাথে র‍্যাবের গাড়িও টহল দিচ্ছে।

লঞ্চ এবং বাস টার্মিনাল কোথাও কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে যাত্রী না থাকার কারণে সেগুলো ছাড়ছে না। আন্তঃজেলা লঞ্চগুলোতে যাত্রীর অভাবে সিডিউল পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।

তবে ঢাকার সাথে বরিশালের লঞ্চ যোগাযোগ চালু আছে এবং সেগুলো মোটামুটি নিয়মিতই চলছে বলে জানান তিনি। প্রতিদিন রাত ও সকালে ঢাকা থেকে লঞ্চ যাওয়া-আসা করছে।

বাসের ক্ষেত্রে যাত্রী না থাকায় কম চলছে। নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে না।

তিনি বলেন, গ্রিনলাইন, শ্যামলী, হানিফ, সাকুরার মতো বড় পরিবহনগুলোর চলাচল একেবারেই বন্ধ আছে। তবে ছোট ছোট কিছু কোম্পানির পরিবহন চলাচল করলেও সেগুলোর সংখ্যা বেশ কম।

সিলেট জেলার স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদ নূর বলেন, বিএনপি অবরোধ ডাকার পর প্রথম দুই দফায় সিলেটে বেশ কিছু প্রভাব দেখা গেলেও আজ খুব বেশি কিছু চোখে পড়েনি। শহরের ভেতরে যান চলাচল করছে।

আন্তঃজেলা বাস চলাচলও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। এছাড়া সিলেট থেকে দূর পাল্লার যান চলাচল করছে না।

“গত দুই দিন ধরে কিছু নাই। এর আগের যে একটু বিক্ষিপ্ত ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া ছিল, এই দুই দিন থেকে কিছু নাই।”

ময়মনসিংহ শহরেও অবরোধের খুব একটা প্রভাব নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। সোমবার অবরোধের কোন কার্যক্রম দেখা যায়নি। আন্তঃজেলা যান চলাচল চালু আছে। সেই সাথে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে বাস চলাচলে বাধা না থাকলেও যাত্রী সংকট রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।


প্রধান প্রধান জেলা শহরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে


রাজশাহীর বিভাগীয় শহরে অবরোধের চিত্র খুব একটা চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, শহরের অবস্থা প্রধানত শান্তিপূর্ণ রয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার আলি জানান, শহরে সোমবার বেশ যানজট চোখে পড়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিক ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সকালে সাতটার দিকে নওদাপাড়া এলাকায় বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা অবরোধের পক্ষে একটি মিছিল করে। এর আগে গত রাতে মশাল মিছিল করেছিল বিএনপি।

সোমবার সকাল ১১টার দিকে মহানগর পার্টি অফিসের সামনে শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ।

নিরাপত্তার স্বার্থে রাজশাহী শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল রয়েছে।

রাজশাহীর সাথে নাটোরসহ বিভাগের অন্য জেলারগুলোর সাথে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত আকারে চলছে। তবে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম। তবে রাজশাহী থেকে দূর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজশাহী থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার আলি।

রংপুরে দূর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকলেও সীমিত আকারে আন্তঃজেলা যান চলাচল চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিক নিশাত ইসলাম। তবে যাত্রী সংখ্যা এবং চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যাও বেশ কম। এছাড়া শহরে অবরোধের তেমন কোন প্রভাব দেখা যায়নি।

অবরোধের পক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল ছাড়া আর কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। তবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট শান্তি সমাবেশ করেছে।

চট্টগ্রামের স্থানীয় সাংবাদিক মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন বলেন, শহরের ভেতরে যান চলাচল করছে। তবে দূর পাল্লার যান চলাচল একেবারেই বন্ধ রয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত মিছিল করেছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মীরাও শহরের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। তবে সোমবার কোন ধরণের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।


রাজধানী ঢাকার সাথে অন্য জেলায় দূর পাল্লার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।


ঢাকায় যানবাহন চলাচলের যে চিত্র দেখা যাচ্ছে

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিন চলছে। এদিন রাজধানীতে যান চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক দেখা গেছে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, গতকালের তুলনায় আজ রাস্তায় যান চলাচল অনেক বেশি দেখা গেছে। কিছু কিছু এলাকায় হালকা যানজটও চোখে পড়েছে।

বিবিসির সংবাদদাতা শাহনেওয়াজ রকি জানাচ্ছেন, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক সিগনালগুলোতে হালকা যানজটও দেখা গেছে।

বিশেষ করে মালিবাগ মোড়, আবুল হোটেল মোড়, কমলাপুরে গাড়ির চাপ বেশি ছিল। এসব মোড়গুলোতে সিগনালে পরিবহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা গেছে।

গণপরিবহনের সাথে সাথে রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচলও গতকালের তুলনায় বেশ বেড়েছে।

মি. রকি জানান, সোমবার রাস্তায় অফিসগামী এবং স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের বেশ চাপ চোখে পড়েছে। গতকালের তুলনায় আজ মানুষের চলাচল আরো বেড়েছে বলেও দেখা গেছে।

ঢাকার বাইরের কয়েকটি জেলা থেকে বেশ কিছু যানবাহন সকালে রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। তবে অবরোধের কারণে এসব পরিবহন সংখ্যায় বেশ কম ছিল। পরিবহনগুলোতে যাত্রী সংখ্যাও কম দেখা গেছে।

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, সকাল নয়টা পর্যন্ত এই টার্মিনালটি থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী ১০টার বেশি বাস ঢাকা ছেড়ে গেছে।

গতকাল সকালে এই রুটে মাত্র তিনটি গাড়ি ছেড়ে গিয়েছিল বলে জানায় টার্মিনালে বিভিন্ন বাস কোম্পানির অপারেটররা।

তারা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গের বরিশাল ও খুলনা রুটে এসব পরিবহন ছেড়ে গেছে। তবে সকাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস ছেড়ে গেলেও সেগুলোতে যাত্রী সংখ্যা খুব বেশি ছিল না।



গতকালের তুলনায় রাজধানীতে আজ যান চলাচল বেড়েছে


একজন বাস অপারেটরের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল সাড়ে নয়টা পর্যন্ত দুটি বাস ছেড়েছে তার কোম্পানির। এর মধ্যে একটি বাসে পাঁচজন এবং আরেকটি বাসে ছয়জন যাত্রী ছিল।

ওই অপারেটর জানান, যাত্রী কম থাকলেও ‘নেতাদের চাপে’ বাস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

আর অবরোধের মধ্যেও ঢাকাসহ সারাদেশে সব রুটে বাস-মিনিবাসসহ সব ধরণের গণপরিবহন চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

অবরোধের সময় ঢাকার সদরঘাট এলাকা থেকে কিছুটা লঞ্চ চলাচল করছে। তবে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় কম সংখ্যক লঞ্চ ছাড়ছে। তবে স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী সংখ্যাও কম ছিল বলে জানা যাচ্ছে।

কমলাপুর ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলার সাথে রেল চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

অবরোধে গতকালের মতো আজও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। গতকালকের মতো আজও তারা অবরোধ বিরোধী অবস্থান কর্মসূচি এবং শান্তি সমাবেশ চালিয়ে যাবে বলে জানা যায়।

রোববারও অবরোধ বিরোধী শান্তি সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

অবরোধ শুরুর আগের দিন শনিবার এক সংবাদ পুলিশ জানিয়েছে, অবরোধ চলার সময়ে সারা দেশের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। নাশকতা রোধে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর কথাও জানানো হয়েছে।

এদিকে র‍্যাব জানিয়েছে, গাড়িতে আগুন দেওয়ার সময় আব্দুল্লাহপুর এলাকায় একজন 'নাশকতাকারীকে' গ্রেফতার করা হয়েছে।


ঢাকায় অবরোধে ক্রেতাশূন্য দোকানে অলস বিক্রেতা


পরিবহনে আবারো আগুন

অবরোধের সময় গতকালকের মতো রোববার রাতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গত রাতে রাজধানীর অন্তত তিনটি স্থানে বাস ও কাভার্ড ভ্যানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে।

সংস্থাটির নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানা যায়, গত রাত আনুমানিক পৌনে তিনটার দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বর এলাকায় ইতিহাস পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন লাগার এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়।

এছাড়া মুগদা বিশ্বরোড সবুজবাগ এলাকায় রাত একটার দিকে একটি কাভার্ডভ্যানে আগুন দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস খবর পেলেও ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগে স্থানীয় জনতাই আগুন নিভিয়ে ফেলে। এতে দুই লাখ টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতির কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।

এছাড়া নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে প্রিতমপুর বাজারে ২০টি দোকানে আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে দোকানগুলোতে আগুন লাগে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। খবর পেয়ে পরে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।

দোকানে আগুন লাগার ঘটনাটি অবরোধের সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

রোববার ভোর থেকে বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধ শুরু হয়। ৪৮ ঘণ্টার এই অবরোধ চলবে মঙ্গলবার ভোর ছয়টা পর্যন্ত।

গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি।

ওই সমাবেশের পরদিন ২৯শে অক্টোবর হরতাল পালন করে বিএনপি, তাতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলো সমর্থন দিয়েছিল।

এরপর ৩১শে অক্টোবর থেকে দোসরা নভেম্বর এবং পাঁচ ও ছয়ই নভেম্বর আরো দুই দফা সড়ক-রেল-নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ বিএনপি। ওই কর্মসূচির পরে আট ও নয়ই নভেম্বর তৃতীয় দফা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ করে বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো।

সর্বশেষ রোববার সকাল ছয়টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত তারা চতুর্থ দফার অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

এই দফা কর্মসূচি শেষে আবার নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন।



সোমবার রাতেও বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। (রোববারের ছবি)



কেমন ছিল রোববারের অবরোধ


বিএনপির ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধের প্রথম দিন ছিল রোববার। সেদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যায় কম হলেও সড়কে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করেছে।

অফিস শুরুর সময়ে রাজধানীর ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ সিগনালে গাড়ির জট তৈরি হলেও বেশি সময় আটকে থাকেনি। গণপরিবহন চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা কম ছিল।

রোববার হাতে গোনা দুয়েকটি বাস ছাড়া দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধই ছিল। ঢাকা ছাড়তে গিয়ে বাস না পেয়ে অনেক যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। স্বল্প দূরত্বে ছোট ছোট পরিবহনে করে অনেকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন।

ঢাকার প্রবেশমুখ গুলোতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিয়ে শান্তি সমাবেশ করতে দেখা গেছে। অন্যান্য জেলাতেও মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন।

তবে এদিনও গণপরিবহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।

রোববার অবরোধ শুরুর আগে শনিবার রাতে ঢাকা ও এর আশেপাশে নয়টি স্থানে যানবাহনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, শনিবার রাত আটটা থেকে রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এসব আগুন দেয়ার ঘটনায় আটটি বাস ও একটি পিকআপ পুড়ে গেছে।

এসব ঘটনার মধ্যে সাতটি আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে ঢাকা মহানগরে। বাকি দুটি ঘটনা ঘটেছে গাজীপুর ও বরিশাল সদরে।

এদিকে শনিবার রাতে ফেনী জেলা যুবদলের সভাপতি জাকির হোসেন জসিম এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খন্দকারসহ চার জনকে আটক করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

ঢাকায় গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

এদিকে, একই মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ইউসুফ আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব মিডিয়া শাখার উপ পরিচালক লুৎফুল হাদি।

বিএনপি দাবি করছে, ঢাকাসহ সারাদেশে মামলা এবং পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, বগুড়া, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল এবং কোথাও কোথাও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করার কথা জানিয়েছে।