![]() |
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী |
বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি তৃতীয় দফায় আবারো টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সর্বশেষ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ আগামীকাল ভোর ছয়টায় শেষ হবে।
বিকেলে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আট ও নয়ই নভেম্বর সর্বাত্মক অবরোধের এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
মঙ্গলবার এক দিন বিরতি দিয়ে দেয়া এই অবরোধ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার এক দিন বিরতি দিয়ে দেয়া এই অবরোধ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির দ্বিতীয় দফা অবরোধের শেষ দিনে ঢাকা, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, অবরোধের প্রথম দিনের মতো সোমবারেও ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, সায়েদাবাদ এবং মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায়নি বলে খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকার রাস্তায়ও সকালে তুলনামূলকভাবে কম যান চলাচল করতে দেখা গেছে, যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা বেড়েছে।
এছাড়া ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রবেশদ্বার গুলোতে পুলিশের পাশাপাশি সরকার সমর্থকদের অবস্থান চোখে পড়েছে। তবে বিএনপি তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।
সোমবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় প্রগতি সরণির ছবি। |
আবারো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
সংবাদ সম্মেলনে মি. রিজভী বলেছেন, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে একদিন বিরতি দিয়ে বুধবার ভোর ছয়টা থেকে শুক্রবার ১০ই নভেম্বর ভোর ছয়টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশের পরদিন বিএনপি একদিনের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি পালন করে।
এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ৩১শে অক্টোবর থেকে দোসরা নভেম্বর পর্যন্ত সড়ক-রেল ও নৌ পথে সর্বাত্মক অবরোধ দেয় বিএনপি। পরে একই কর্মসূচি দেয় জামায়াতে ইসলামীসহ বিএনপির সমমনা দলগুলো।
এরপর দ্বিতীয় দফায় এ সপ্তাহের শুরুতে আবার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের কর্মসূচি দেয় বিএনপি, যা মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চলবে।
সোমবার দুপুরে ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় এই বাসটিতে আগুন দেওয়া হয় |
যানবাহনে আগুন
সোমবার বিকেল পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচটি যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এর মধ্যে দুপুর দুইটার দিকে ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় বঙ্গবন্ধু স্কয়ার হল মার্কেটের সামনে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার।
পরে সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দু'টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।
আগুন লাগার সময় বাসটিতে যাত্রী ছিলো। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
এর আধা ঘণ্টা পর ঢাকার খিলগাঁও এলাকায় আগুন দেওয়া হয় একটি মালবাহী ট্রাকে।
প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারা এবং পটিয়ায় দু’টি সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া রবিবার রাতে ঢাকার হাজারীবাগ, পোস্তগোলা, বাংলামোটর এবং গাজীপুরের কদমতলীতে চারটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এছাড়া খিলগাঁওয়ে একটি লেগুনায় আগুন দেওয়া হয়।
শামসুজ্জামান দুদু গ্রেফতার
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশের সময় ঘটা সংঘর্ষের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
এর আগে, রবিবার রাতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সব মিলিয়ে গত কয়েকদিনে কেন্দ্রীয় নেতাসহ কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
তবে গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপির সমাবেশের দিন থেকে চৌঠা নভেম্বর পর্যন্ত সাত দিনে সংঘর্ষ–সহিংসতার ঘটনায় ঢাকায় ৮৯টি মামলা হয়েছে বলে রবিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ।
এসব মামলায় বিএনপি ও দলটির সহযোগী অঙ্গসংগঠনের দুই হাজার ১৭২ নেতা–কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবরোধবিরোধী মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা |
মাঠে আওয়ামী লীগ, দেখা নেই বিএনপির কর্মীদের
সোমবার সকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ বিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের।
ঢাকার গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, গাবতলী, কুড়িলসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মিছিল-সমাবেশের পাশাপাশি লাঠি-সোটা হাতে বসে থাকতে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।
নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর এবং নরসিংদীতেও সরকার সমর্থকদের এমন অবস্থান চোখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতারা।
তবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন কোন উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
রাস্তায় গাড়ি কম
রবিবারের মতো সোমবার সকালেও ঢাকার রাস্তায় সীমিত সংখ্যক গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে।
সকালে ঢাকার লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, গাবতলীয়, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, ধানমণ্ডি, পান্থপথ, গ্রিনরোড, কারওয়ান বাজার, তেঁজগাও, মহাখালী, গুলশান, মিরপুর, বাংলামোটর, কাকরাইল, পল্টন, মতিঝিল, যাত্রাবাসী সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অল্পকিছু যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং পিকআপ ভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বিবিসি সংবাদদাতা।
এছাড়া অবরোধের আগের দিনের মতোই ঢাকায় রিক্সা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বেশি চোখে পড়েছে। আর ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা ধীরে ধীরে কিছুটা বাড়ে।
তবে সকালে ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর উদ্দেশ্য স্বল্প দূরত্বের কিছু বাস ছাড়া হয়েছে বলে জানান বাসের টিকেট বিক্রেতারা।
তারা বলছেন, অবরোধের কারণে পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় দূরপাল্লার বাসগুলো ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ থাকায় টার্মিনালে অলস পড়ে আছে সারি সারি বাস |
ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
সোমবার সকালে ঢাকার কমলাপুর রেল স্টেশনে স্বাভাবিক দিনের মতোই ট্রেন চলাচল করতে দেখা গেছে। নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ীই সব ট্রেন ছাড়া হচ্ছে বলে বিবিসি সংবাদদাতাকে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
তবে স্টেশনে যাত্রীদের সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম দেখা গেছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর রেল স্টেশনের চিত্র |
পুলিশের টহল
গত কয়েকদিনের মতোই সোমবার সকালেও ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় র্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি দলকে টহল দিতে দেখা গেছে।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় এবং ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পুলিশের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে ।
টানা নয় দিন তালাবন্ধ রয়েছে বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়। কার্যালয়টি সর্বশেষ খোলা হয়েছিলো গত ২৮শে অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশের দিন।
সেদিনের সংষর্ঘ ও প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশ ধরপাকড় শুরু করলে আর কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
গত নয়দিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আছে পুলিশ।
সেদিনের সংষর্ঘ ও প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশ ধরপাকড় শুরু করলে আর কার্যালয়ে আসতে দেখা যায়নি বিএনপি নেতাকর্মীদের।
গত নয়দিন ধরে নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আছে পুলিশ।
গত নয়দিন ধরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে আছে পুলিশ |
প্রথমদিন যা ঘটেছিলো
বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের প্রথম দিনে ছিলো রবিবার। এদিন ঢাকার উত্তরায় ককটেল বিস্ফোরণে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন বলে বিবিসি বাংলাকে জানান উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ আলম। এ ঘটনায় এক ব্যক্তিকে আটক করা হয় বলেও জানান তিনি।
এর আগে, রবিবার সকালে বগুড়ায় বিএনপি কর্মীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানান বগুড়া সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইহান ওলিউল্লাহ। তবে এসব ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি বলেও জানান তিনি।
এছাড়া শনিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০টি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
দলের আরেক ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর এবং ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্সকেও শনিবার রাতে আটক করা হয় বলে জানায় বিএনপি।
পরে রবিবার দুপুরে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের নেতাকর্মীদের আটকের নিন্দা জানিয়ে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
0 Comments