ইসরায়েলি জিম্মি এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের প্রথম দল দুটি মুক্তি পেল

 

জিম্মিদের মুক্তির ছবি লাইভ দেখাচ্ছে মধ্য প্রাচ্যের টিভি চ্যানেলগুলি


ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে হামলা চালিয়ে হামাস গত সাতই অক্টোবর যাদের জিম্মি করে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে ২৪জনকে তারা কিছুক্ষণ আগে মুক্তি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং ইসরায়েলি সেনা এ খবর নিশ্চিত করেছে।

কাতারের মধ্যস্থতায় যে শান্তি চুক্তি হয়েছে হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে, সে অনুযায়ী হামাস এ জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে।

শুক্রবার যেসব জিম্মিদের মুক্তি দিয়েছে হামাস, তাদের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন ইসরায়েলি, ১২ জন থাইল্যাণ্ডের নাগরিক আর একজন ফিলিপিন্সের নাগরিক। এদের বদলে তাদের হাতে আটক হওয়া ৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল।

আজ শুক্রবার হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে এ
যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া চুক্তির শর্ত ছিল, প্রথমদিন হামাস ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে; অপরদিকে ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে ৩৯ ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেবে। চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে দুই দেশের বন্দি বিনিময়ের কাজটি ঠিক মতো সম্পন্ন হয়।

ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি। তিনি বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল ৩৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে।

হামাস আজ শুক্রবার যেসব ইসরায়েলি ১৩ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে তাদের সবাই নারী ও শিশু। অপরদিকে ইসরায়েল যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে তারাও সবাই নারী ও শিশু।

মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা ওফার কারাগারে বন্দি ছিলেন। এসব ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে বের করার আগে সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে ইসরায়েলি পুলিশ। যেন যারা মুক্তি পাচ্ছেন তাদের নিয়ে সাধারণ মানুষ আনন্দ-উল্লাস করতে না পারেন।

ইসরায়েল জানিয়েছে, যেসব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন সৈন্যদের হত্যাচেষ্টার দায়ে আটক হয়েছিলেন। আর যেসব শিশুকে ছাড়া হয়েছে তাদের সৈন্যদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার মতো ছোট অপরাধের কারণে আটকে রাখা হয়েছিল।

শান্তি চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৫০ জন জিম্মিকে ছেড়ে দেবে আর বদলে ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছাড়বে ইসরায়েল। চারদিন ধরে এই প্রক্রিয়া চলবে আর এই কদিন দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি বহাল থাকবে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মিশরের দিক থেকে ৬০ ট্রাক ভর্তি ত্রাণসামগ্রী গাজায় পৌঁছবে যার মধ্যে থাকবে ওষুধপত্র, জ্বালানী আর খাদ্য সামগ্রী থাকবে।

রাফা সীমান্ত দিয়ে জিম্মিদের মুক্তি


হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের নিয়ে রাফা সীমান্তের দিকে যাচ্ছে রেড ক্রসের গাড়ি

পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি জেল থেকে দুটি বাস বেরতে দেখা গেছে।



জিম্মিদের সবাইকেই মিশর-গাজা সীমান্তের রাফা সীমান্ত দিয়েই মুক্তি দেয়া হয়েছে।

প্রথমে জিম্মিদের গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস। তারাই দায়িত্ব নিয়ে জিম্মিদের রাফা সীমান্ত পার করিয়ে দেয়।

বিভিন্ন স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল জিম্মিদের মুক্তির ভিডিও দেখিয়েছে। জিম্মিদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সগুলি যখন রাফা সীমান্তের দিকে এগোচ্ছিল তখন বহু মানুষকে দৌড়ে দৌড়ে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ভিডিও তুলতে দেখা গেছে।

রাফা সীমান্ত পেরনোর পরে জিম্মিদের প্রত্যেকের শারীরিক পরীক্ষার জন্য মিশরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের পরিবার অপেক্ষা করছিল। মুক্তি পাওয়া জিম্মিদের সঙ্গে ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

শারীরিক পরীক্ষার পরে জিম্মি থাকা ইসরায়েলি নাগরিকরা নিজ দেশের মাটিতে পৌঁছিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

থাইল্যান্ড শুক্রবার বলেছে, ইসরায়েলে হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মধ্যে থেকে তাদের ১২ জন নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে বলেছেন, ১২ থাইকে গাজার বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।


এই ইসরায়েলি নাগরিক ড্যানিয়েল আলোনি ও তার মেয়ে এমিলিয়াকে শুক্রবার রাতে ছেড়ে দিয়েছে হামাস


ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের অপেক্ষা বেইতুনিয়া চেক পয়েন্টে


দুই তরফেই বন্দী বিনিময় হওয়ার অন্যতম শর্ত হিসাবে গাজায় ত্রাণ সামগ্রী ঢুকতে দিতে হবে। রাফা সীমান্তে ত্রাণ নিয়ে অপেক্ষায় ট্রাকের সারি



ফিলিস্তিনিরা কোথায়?

পশ্চিম তিরে অবস্থানরত বিবিসি সংবাদদাতা লুজি উইলিয়ামসন জানাচ্ছেন বেইতুনিয়া চেক পয়েন্ট দিয়ে ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। সেখানে বহু মানুষ হাজির হয়েছেন। মানুষ সেখানে চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছেন, “বন্দীরা কোথায়? বন্দীরা কোথায়?”

খবর পাওয়া গিয়েছিল যে ফিলিস্তিনি বন্দীদের একাংশের সঙ্গে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হাতাহাতি হয়েছে, সেজন্যই তাদের ছাড়তে দেরি হয়।

এর আগে জেরুসালেম থেকে বিবিসি সংবাদদাতা টম বেটম্যান খবর দিয়েছেন যে চুক্তি অনুযায়ী ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ইসরায়েল দুই ঘণ্টা সময় পাবে। তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে ফিলিস্তিনি নারী ও নাবালক ওই বন্দীদের দিনে আরও আগে উত্তর ইসরায়েলের দুটি জেল থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের একটি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

তবে বাংলাদেশী সময় রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বিবিসি সংবাদদাতারা জানিয়েছিলেন যে অধিকৃত পশ্চিম তিরের ইসরায়েলি কারাগার থেকে দুটি বাস বেরুতে দেখা গেছে।

আর তার মিনিট ২০ পরে বিবিসি সংবাদদাতারা খবর দিয়েছেন যে রামাল্লার কাছে বেইতুনিয়া চেকপয়েন্ট দিকে ফিলিস্তিনিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

এরপরে আগামীকালও আরও এক দল বন্দী ও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার কথা শান্তি চুক্তি অনুযায়ী।

চার দিনের যুদ্ধবিরতিতে মোট ৫০ জন জিম্মি এবং ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যদিও ইসরায়েল বলেছে যে হামাস প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ জন করে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া অব্যাহত রাখলে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো যেতে পারে। ফিলিস্তিনের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১০০ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।

Post a Comment

0 Comments