‘বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়’- উল্লেখ করে ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে যে বার্তা দিয়েছে সেটি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কিছুটা ‘স্বস্তি’ দিলেও বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান থেকে না সরলে’ তাদেরও এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই।

দল দুটির বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন এমন নেতাদের কয়েকজনের সাথে আলাপ করে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে যাই বলুক যুক্তরাষ্ট্র সেটি মেনে নিয়েছে এমন কোন তথ্য এখনো তাদের কাছে আসেনি।

বরং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে অবস্থান নিয়েছে তা থেকে সরে আসারও কোন ইঙ্গিত তারা পাননি।

বরং দলটি সংসদ নির্বাচন নিয়ে ঢাকায় গত নয়ই নভেম্বর চীনা রাষ্ট্রদূতের দেয়া একটি বক্তব্যের প্রতিবাদ করে শনিবার বিবৃতি দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে ‘রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি’।

তবে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলছেন যে ভারতের বক্তব্য কার পক্ষে গেলো তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যে, ভারত তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। এবং এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে যার প্রতিফলন বাংলাদেশের রাজনীতিতেও দেখা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব গত দু বছর ধরে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসলেও, বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত সরকারের দিক থেকে এতদিন কোন বক্তব্য বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

তবে শুক্রবার ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতের বিদেশ সচিব ভিনয় কোয়াত্রা, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতের নীরবতারও অবসান হলো।


ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকের পর ভারতের বিদেশ সচিব ভিনয় কোয়াত্রা শুক্রবার বলেছেন, ওই বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

এ সময় তার মন্তব্য ছিলো, “বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি আমরা। বাংলাদেশের নির্বাচন সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং সে দেশের মানুষই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পরে ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ বিবৃতি জারি করেছে, যদিও তাতে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গটি আসেনি।

খবরটি মুহূর্তের মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে এবং দলগুলোর মধ্যে এ নিয়ে নানা মুখী আলোচনা ও বিশ্লেষণ এখনো চলছে।

এর কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্র এর আগের দুটি নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন তৎপরতা দেখায়নি, বরং তখন ভারতকেই বেশ সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে - যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলো উষ্মাও প্রকাশ করেছে।

দেশের রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের অনেকেই মনে করেন ভারতের নিরঙ্কুশ সমর্থনের কারণেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে খুব একটা বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে।

কিন্তু ২০২১ সালে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে নানা ভাবে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

নির্বাচন নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ভিসা নীতি ঘোষণাসহ বিভিন্নভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ শুরু করে, যার তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা।

তবে আমেরিকা ও পশ্চিমাদের নানা তৎপরতা সত্ত্বেও ভারত এতদিন নির্বাচন ইস্যুতে কোন আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের বক্তব্যটি এলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর।

  
                           
                                       'টু প্লাস টু' বৈঠকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা


ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে (২ +২) আলোচনা শেষে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ নেই। ফলে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঐকমত্য হয়নি, সেটা পুরোপুরি স্পষ্ট। দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে আলোচনার পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দিল্লির অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছেন। নিকট প্রতিবেশী বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি কী, সেটা কিছু শব্দে খুব পরিষ্কার।


 
2024 জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এ নির্বাচন হওয়ার কথা।



বাংলাদেশের ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’, ‘স্থিতিশীলতা’, ‘শান্তিপূর্ণ’ এই শব্দগুলোর পাশাপাশি একটি ‘প্রগতিশীল’ দেশ নিয়ে ভারত তাদের আকাঙ্ক্ষার কথা স্পষ্ট করেই তুলে ধরেছে। কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই বাংলাদেশ নিয়ে ভারত তাদের অগ্রাধিকার কোথায়, সেটা জানিয়ে দিয়েছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় কী বলেছে, সেটা আমাদের জানা নেই। তার অর্থ হতে পারে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ নিয়ে, বিশেষ করে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দ্বিমত আছে। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি সম্প্রতি বলেছিলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারত তাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে।

আর যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান ভারতকে জানিয়েছে। ফলে দিল্লির সর্বশেষ বৈঠকে দুই দেশের অবস্থানের পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।

এটা অনস্বীকার্য যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে (২ +২) আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলোই প্রাধান্য পেয়েছে। সেখানে আইপিএস (ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল কৌশল), চীন, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপের মতো প্রসঙ্গগুলো এসেছে। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং সংযুক্তির বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করেছেন। এ বিষয়গুলোতে দুই পক্ষের 
আগ্রহ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানটি আন্তর্জাতিক এবং ভারতের অবস্থানটি আঞ্চলিক মনোযোগের প্রেক্ষিতে বিবেচনায় নিতে হবে। বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার। ফলে বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে একটা ইতিবাচক বিবর্তন হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রায় দুই দশক ধরে ভারতের সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে। তাই স্থিতিশীলতাকেই ভারত প্রাধান্য দিচ্ছে।


বিএনপি ও আওয়ামীলীগ কী বলছে

ভারতের বক্তব্য নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে দুই দলই বেশ সতর্কতা দেখিয়েছে। তবে উভয় দলের সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন তারা আসলে বোঝার চেষ্টা করছেন সামনে কেন দেশ কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে বিএনপির দেখার বিষয় হলো - ভারতের তৎপরতা কেমন হয় আর আওয়ামী লীগ দেখতে চাইছে যে ভারতের অবস্থান প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র কী করে বা কী ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে ভারতীয় নেতারা দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলার বিষয়টি আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন দলটির অনেকে।

দলটির সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বিবিসিকে বলেছেন, এতে তাদের উল্লসিত বা হতাশার কিছু নেই।

তিনি বলেন, “নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং একেবারেই নিজস্ব রাজনীতি। সেটি নিয়ে অন্যরা কী আলোচনা করলো সেটি তো আমাদের দেখার বিষয় নয়। ভারত তার জাতীয় স্বার্থে যা ভালো মনে করে তাই করবে।

আমরাও আমাদের জাতীয় স্বার্থে যেটি ভালো মনে করবো তাই করবো। এ নিয়ে কোন বন্ধু রাষ্ট্রেরই অতি উৎসাহ বা অতি তৎপরতা দেখানোর কিছু নেই,” বলছিলেন মি. রহমান।

তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখতে নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করে যা বলেছে, সেটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে এগিয়ে নিতেও সহায়তা করবে।

“অভ্যন্তরীণ নির্বাচন নিয়ে তো আর এক দেশ আরেক দেশকে কিছু বলতে পারে না। সেটি শোভনীয়ও নয়, গণতান্ত্রিকও নয়,” বলছিলেন মি. রহমান।

কিন্তু বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলছেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ বলেই আরেকটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রেও তাদের সহযোগিতা করা উচিত।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভারতের সাহায্য করা উচিত, যাতে এদেশের মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পায়।

“দেশের বেশীরভাগ মানুষ ভোটের জন্য লড়াই করছে এবং সরকারি দল ছাড়া সব দলই এ লড়াইয়ে সামিল হয়েছে। উভয় দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচিত সরকারই জরুরি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উভয় দেশের উন্নয়নের জন্য,” বলেন তিনি।

এসব কারণে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বাংলাদেশে যেন আরেকটা ভোটার বিহীন নির্বাচন না হয় সেদিকেও বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের খেয়াল রাখা উচিত’।

"এবং কোনভাবেই এটিকে (বাংলাদেশের) অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে বিরাট জনগোষ্ঠীর দাবিতে এড়িয়ে যাওয়া সঠিক হবে না।"


                                                                    চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে বিএনপির বিবৃতি।



অর্থ আসলে কী ?

বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত যা বলেছে তাতে এটি পরিষ্কার যে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার যে স্বচ্ছন্দময় পরিবেশ ভারত উপভোগ করছে সেটিকে তারা নষ্ট হতে দিতে চায় না।

“বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার যে অবস্থান সেটি কিন্তু নীতিগত। অর্থাৎ তারা গণতন্ত্র বা মানবাধিকার এসব কিংবা সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গীকার সে প্রেক্ষাপটে কথা বলছে।সে তুলনায় ভারতের অবস্থান অনেক বেশি স্পষ্ট হওয়ার কারণ তাদের কাছে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ,”তবে নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান প্রকাশের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রতিফলন পড়বে বলেও তিনি মনে করেন।এর ফলে গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে সরকার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিষয়ে যে অবস্থান নিয়েছে সেটি আরও জোরালো হবারও সম্ভাবনার কথাও বলছেন অনেকে।তবে বিশ্লেষকদের আরেকটি অংশ মনে করেন, গত এক দশক ধরে এই অঞ্চলে আমেরিকা ‘ভারতের চোখ’ দিয়ে দেখার যে নীতি অবলম্বন করছিলো তার সুফল পেয়েছে আওয়ামী লীগ গত দুটি নির্বাচনে।এবার আমেরিকা নিজেই একটি স্বতন্ত্র অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের মধ্যে নানা টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।কিন্তু তারপরেও চীনের কারণে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গত কয়েক বছরে তৈরি হয়েছে সেখানে ভারতের অবস্থানের বিশেষ গুরুত্ব থাকবে।বিবিসি বাংলাকে মি. হোসেন বলছিলেন, এসব কারণেই আমার মনে হয় আওয়ামী লীগ সরকার এখন আরেকটু আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যাবে।“এখন তাদের মনোবল আরও বাড়তে পারে, তা অন্যরা যা-ই মনে করুক না কেন। আর আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে ভারতের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারই যে কোন পরিস্থিতিতে কাম্য।” যদিও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহমান বলছেন ভারতের অবস্থানের কোন প্রতিফলন এখানে আসার সুযোগ নেই কারণ নির্বাচনটি ‘একান্তই বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়’।



বিবৃতি বিএনপির'

ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে তা নিয়ে দলীয় ভাবে কোন প্রতিক্রিয়া বিএনপি দেয়নি। তবে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন গত নয়ই নভেম্বর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপি।

আজ দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চীন বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী আসন্ন নির্বাচন দেখতে চায় বলে রাষ্ট্রদূত ওয়েন যে মন্তব্য করেছেন তা জনগণের ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন নয়”।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “জনগণের একটি সুবিশাল অংশ গত দশ বছরে ভোট প্রদানের কোন সুযোগ পাননি। আর তাই, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন ও কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার অধীনে নয়, বরং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাচ্ছেন।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন সমগ্র জাতি গণতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের ভোটের অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধারের প্রয়াসে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি জানাচ্ছে।”

অবশ্য চীনের বক্তব্য নিয়ে বিএনপির অসন্তোষ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চীনা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলো বিএনপি।

দলের নেতারা এ বিষয়ে আর কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে কেউ কেউ বলছেন ‘চীনা দূতের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মূলত বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিয়েছে যে তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে এখন যুক্তরাষ্ট্রই মুখ্য’।

দলের নেতাদের আশা ভারত যাই বলুক আর করুক যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ইস্যুতে তাদের নীতিতেই অটল থাকবে।