বহু মানুষ আল শিফা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
উত্তর গাজা এলাকার পর এখন দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর ছাড়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনী স্থল অভিযান শুরু করার পর লাখ লাখ মানুষ সেখান থেকে পালিয়ে খান ইউনিসে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন নিদের্শনার ফলে ধারণা করা হচ্ছে যে, দক্ষিণ গাজা এলাকাতেও খুব তাড়াতাড়ি অভিযান শুরু করা হবে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসকে একেবারে নির্মূল করে ফেলাই হচ্ছে তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সাতই অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ মানুষের মৃত্যু হওয়ার পর পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
শনিবার খান ইউনিসের একটি বাড়িতে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ওই ঘটনার বিষয়ে এখনো কোন মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
কিন্তু খান ইউনিসে লিফলেট বিতরণ করেছে ইসরায়েল। সেখানে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একজন উপদেষ্টা মার্ক রেজেভ বলেছেন, ''আমরা মানুষজনকে অন্যত্র চলে যেতে বলছি, কারণ আমরা চাই না বেসামরিক মানুষজন ক্রসফায়ারে পড়ে মারা যাক।''
তিনি বলেছেন, ভূগর্ভস্থ টানেলে লুকিয়ে থাকা হামাস যোদ্ধাদের নিমুর্ল করতে ওই শহরের দিকে অগ্রসর হওয়ার দরকার হতে পারে ইসরায়েলি বাহিনী।

ইসরায়েল হামলা চালানোর পর থেকে বহু মানুষ আল শিফা হাসপাতালে আশ্রয় নেয়।
আল-শিফা হাসপাতাল ছেড়েছে শত শত মানুষ
গাজা শহরের প্রধান হাসপাতাল ছেড়ে শনিবার শত শত মানুষ চলে গিয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন রোগীও আছেন।
সেখানকার কয়েকজন মেডিকেল কর্মকর্তা বলেছেন যে, তাদের চলে যেতে বলা হয়েছিল, কিন্তু ইসরাইল তাদের এই দাবির বিরোধিতা করেছে।
গোলাগুলির মধ্যে অনেক মানুষকে ধ্বংসস্তূপের মধ্যেকার পথ দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে।
হামাসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, উত্তর গাজার জাবালিয়ায় দুটি বিস্ফোরণে একসঙ্গে ৮০ জন নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বিবিসিকে বলেছে যে তারা জাতিসংঘের একটি স্কুলে-যেটা কিনা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছিল, সেখানে হামলা চালিয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি, তবে তদন্ত করছে।
বিবিসি জাবালিয়ার আল-ফাখৌরা স্কুলের জিওলোকেটেড ফুটেজ ভেরিফাই করে দেখেছে যে, স্কুলটিতে নারী ও শিশুসহ অনেক মানুষ গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে।
ভবনের বিভিন্ন অংশে মানুষকে মেঝেতে নিশ্চল অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ফুটেজে এমন ২০টিরও বেশি হতাহতের ঘটনা দেখা গিয়েছে, এবং এর মধ্যে প্রায় অর্ধেককে নিচতলায় একটি নির্দিষ্ট ঘরে দেখা যায়।
এমনটা দেখে ধারণা করা যায়, ওই আশ্রয়কেন্দ্রটি যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ-এর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন যে, তিনি তার এজেন্সির একটি স্কুলে অসংখ্য মানুষ হতাহত হওয়ার ভয়ঙ্কর ছবি এবং ফুটেজ দেখেছেন।
ওই স্কুলটিতে "হাজার হাজার বাস্তুচ্যুতকে আশ্রয় দেওয়া" হয়েছিল।
"এই হামলাগুলোকে সাধারণ ঘটনা বানিয়ে ফেলা যাবে না, তাদের অবশ্যই থামাতে হবে," তিনি বলেন।

আল শিফা হাসপাতালে অনেক অপরিণত শিশু রয়ে গিয়েছে।
ছবিটি কয়েকদিন আগে তোলা হয়েছে।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা জানিয়েছে যে তারা হামাসকে লক্ষ্য করে জাবালিয়াসহ গাজার বিভিন্ন স্থানে অভিযান সম্প্রসারিত করেছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় মৃতের সংখ্যা ১২ হাজার তিনশ ছাড়িয়েছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও দুই হাজারের বেশি মানুষ চাপা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নেতৃত্বে জাতিসংঘের একটি যৌথ দল আল-শিফা হাসপাতাল পরিদর্শন করে ওই স্থানটিকে “ডেথ জোন” বা "মৃত্যুপুরী" বলে আখ্যা দেয়।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ওই হাসপাতালটি দখলে নেয়ার পর এবং মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়ার পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ দলটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে।
যৌথ দলটি এক ঘণ্টার জন্য হাসপাতালের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে, এবং তারা জানায় যে তারা হাসপাতালের ভেতরে, গোলা বর্ষণ ও গোলাগুলির আলামত পেয়েছে।
সেইসাথে হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে একটি গণকবর দেখা গিয়েছে।
সেখানে অন্তত ৮০ জনের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আল-শিফা হাসপাতাল থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ার পরও সেখানে অন্তত তিনশ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী থেকে গিয়েছেন - এটি গাজার সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে উন্নত হাসপাতাল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ দল বলেছে যে, তারা গাজায় অবশিষ্ট রোগী এবং কর্মীদের জরুরিভাবে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
হাসপাতালের একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, যেসব "রোগী নড়াচড়া করতে পারে না এবং খুব অল্প সংখ্যক চিকিৎসক" হাসপাতালে রয়ে গিয়েছেন।
আল-শিফায় থাকা এক সাংবাদিক খাদের বিবিসিকে বলেছেন, "আমরা আমাদের হাত তুলে সাদা পতাকা উড়িয়েছি।"
"গত রাতটি খুব কঠিন ছিল। ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং গুলির শব্দ পাওয়া গিয়েছে। বুলডোজার দিয়ে হাসপাতালের আঙিনায় বিশাল গর্ত তৈরি করা হয়েছে। এবং কয়েকটি ভবন ধসে গিয়েছে।"
এর আগে, হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে যে, ১২০ জন রোগী সেইসাথে অনির্দিষ্ট সংখ্যক অপরিণত শিশু হাসপাতালে রয়ে গিয়েছে।

হাসপাতালে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান।
আইডিএফ আল-শিফা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে যে তারা হাসপাতালটির পরিচালকের অনুরোধে, যারা সেখান থেকে সরে যেতে চান তাদের জন্য একটি "নিরাপদ পথ" দিয়ে সরে যাওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "কোনও সময়েই আইডিএফ রোগীদের বা মেডিকেল দলদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়নি এবং বাস্তবে তারা প্রস্তাব করেছে যে হাসপাতাল থেকে সরে যাওয়ার ব্যাপারে যেকোনো অনুরোধ রাখতে আইডিএফ সহায়তা করবে," এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ডা. রামেজ রাদওয়ান নামে এক চিকিৎসক বলেছেন যে তাকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ আল-শিফা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
হাসপাতালের পরিস্থিতিকে "দুঃখজনক" হিসাবে তিনি বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে হাসপাতালে কোন ব্যথানাশক বা অ্যান্টিবায়োটিক নেই এবং “কিছু রোগীর ক্ষতস্থান থেকে কৃমি বের হয়ে আসছে"।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক দিনগুলোয় হাসপাতালে অভিযান চালায়, একে "হামাসের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তবে তারা হাসপাতালের নীচে বড় অভিযান পরিচালনা করেছে কিনা সে ব্যাপারে এখনও যথেষ্ট প্রমাণ দিতে পারেনি।
তারা উত্তর গাজার ফিলিস্তিনিদের নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে চলে যেতে বলেছে এবং একই কথা দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের লোকদের বলতে শুরু করেছে, যেখানে হাজার হাজার মানুষ উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসেছে। এখন তাদেরও চলে যেতে হবে।
0 Comments