মহান সৃষ্টিকর্তার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি হল এই পাখি যে তার লম্বা ও সরু ডানায় ভর করে বাতাসে একবারও ডানা না ঝাপটয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারে এবং ভ্রমণ করতে পারে হাজার মাইলেরও বেশী। বিজ্ঞানীরা উড়তে পারার এই আশ্চর্য ক্ষমতার নাম দিয়েছেন প্রকৃতির এক অলৌকিক প্রকৌশলী হিসাবে। আর সেই হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি (উড়তে সক্ষম) আলবাট্রস। এদের ওজন ১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের ডানার প্রশস্ততা পৃথিবীর সব অন্য পাখির চেয়ে অনেক বড় হয়, দৈর্ঘ্য প্রায় ১১ ফুট মানে প্রায় দুইজন মানুষের সমান।

অ্যালবাট্রোজ Diomedeidae গোত্রের অন্তর্গত একপ্রকার সামুদ্রিক পাখি, যা মূলত অ্যান্টার্কটিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরের আশেপাশে পাওয়া যায়। প্রাচীনকাল থেকে নাবিকদের মধ্যে এই পাখি নিয়ে রয়েছে নানা রকম বিশ্বাস। কারো মতে- এই পাখি সৌভাগ্যের বাহক, কেউ বা ভাবত ঘোর বিপদের চিহ্ন হিসেবে। কেন এমন ভাবনা তৈরি হলো? আসলেই কি ভাগ্যের সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে? এ ব্যাপারে জানার আগে অ্যালবাট্রোজ নিয়ে সাধারণ কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

দৈত্যাকার এই পাখিকে মনে করা হয় মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষ ভ্রমণকারী। এরা শত শত মাইল একটানা উড়ে পাড়ি দিতে পারে। জীবনের বেশিরভাগ সময় এরা আকাশেই ব্যয় করে, প্রজননের সময় ভূমিতে নেমে আসে। এর বৈশিষ্ট্যের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে এর বিশালাকার ডানার কথা। একেকটি ডানা প্রায় ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা। এরা স্কুইড, মাছ, কাঁকড়া এবং আরো কিছু জলজ প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। এখন পর্যন্ত এর মোট ২২টি প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি প্রজাতি বিলুপ্তির পথে এবং আরো কয়েকটি সংকটাপন্ন। অ্যালবাট্রোজ বছরে কেবল একটি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা বেরোয়, এবং আরো তিন সপ্তাহ বাবা-মা ছানার দেখভাল করে। প্রায় ৩-১০ মাসের মধ্যে বাচ্চাগুলো উড়তে শিখে যায়, এবং একসময় বাসা ছেড়ে উড়ে চলে যায়।



এই পাখিটিকে উড়ন্ত পাখির সেটের মধ্যে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে যার পরিমাপ সবচেয়ে বেশি। বৃহদাকার অ্যালবাট্রস (ডিওমেডিয়া গণের) সবচেয়ে বড় ডানার স্প্যান রয়েছে, যা বর্তমানে বিদ্যমান অন্য যে কোনো প্রজাতির চেয়ে বড়। এগুলিকে সাধারণত চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়, তবে তাদের গঠিত প্রজাতির সংখ্যা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন ঐক্যমত নেই।






তাদের খাবারে প্রধানত কিছু মাছ, স্কুইড এবং ক্রিল থাকে, কারণ তারা মৃত প্রাণী সংগ্রহ করে বা তাদের খাবার শিকার করে যদি তারা তাদের শিকারকে জলের পৃষ্ঠে বা তার থেকে অল্প দূরে জীবিত দেখতে পায়, কারণ তারা জলে ডুব দিতেও সক্ষম।

তাদের সামাজিক আচরণ সম্পর্কে, তারা গ্রেগারিয়াস পাখি, তাই তারা উপনিবেশে বাস করে এবং দূরবর্তী মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে তাদের বাসা তৈরি করার অভ্যাস রয়েছে এবং তাদের প্রজননের স্থান অন্যান্য প্রজাতির সাথে ভাগ করা তাদের পক্ষে স্বাভাবিক। তারা একগামী প্রাণী, তাই তারা তাদের অস্তিত্ব জুড়ে জোড়ায় জোড়ায় বাস করে।

আইইউসিএন দ্বারা স্বীকৃত অ্যালবাট্রসের বাইশটি প্রজাতি রয়েছে, যা প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন, যার তথ্য নির্দেশ করে আটটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে, ছয়টি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে এবং দুর্ভাগ্যবশত তিনটি বিলুপ্তির গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে। 



বাচ্চাসহ অ্যালবাট্রোজ




এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সবচেয়ে বয়স্ক পাখিটিও একটি অ্যালবাট্রোজ। ৭০ বছর বয়স্ক পাখিটির নাম উইসডম। ১৯৫৬ সালে প্রাণীবিদ Chandler Robbins এর পায়ে রিং পরান। পাখিটি তার জীবদ্দশায় প্রায় সাত লক্ষ মাইলের মতো সামুদ্রিক পথ পাড়ি দিয়েছে, এবং বর্তমানে তীরে ফিরে এসেছে ডিম পাড়ার জন্য। রিং পরানোর পর প্রায় ৪০ বার ডিম পেড়েছে পৃথিবীর বয়স্কতম এই পাখি, যার সর্বশেষ ডিমটি পেড়েছে ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি ।





অ্যালবাট্রোজ সম্পর্কে প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে- ‘An albatross around your neck’ , যা মূলত ভয়ানক দুর্ভাগ্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয়। অ্যালবাট্রোজ মূলত একটি সামুদ্রিক পাখি, যাকে প্রাচীনকালে নাবিকরা সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করত। তখন বেশিরভাগ নাবিক ছিল কুসংস্কারাচ্ছন্ন। তারা বিশ্বাস করত- অ্যালবাট্রোজ মৃত নাবিকদের আত্মা ধারণ করে এবং জাহাজগুলোকে যেকোনো দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করে। কিছু নাবিক আবার একে দুর্ভাগ্যের প্রতীকও মনে করত। তারা ভাবত- অ্যালবাট্রোজ জাহাজের পিছু নেয়া মানে কোনো না কোনো নাবিকের মৃত্যু হওয়া। সৌভাগ্য হোক বা দুর্ভাগ্য, অ্যালবাট্রোজ হত্যা করা ছিল নিষিদ্ধ। সবাই বিশ্বাস করত- অ্যালবাট্রোজকে হত্যা করলে জাহাজের ওপর অভিশাপ নেমে আসবে। ব্রিটিশ লেখক স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজের কবিতা ‘The Rime of the Ancient Mariner’ অ্যালবাট্রোজের সৌভাগ্য এবং দুর্ভাগ্যের দিক একইসাথে তুলে ধরে।



কবিতার শুরুতে এক বৃদ্ধ নাবিক একজন যুবককে ডাকে তার গল্প শোনানোর জন্য। যুবকটি একটি বিয়ের দাওয়াতে যাচ্ছিল। মাঝপথে বৃদ্ধ নাবিক তার পথ আটকে ফেলে। শুরুতে শুনতে না চাইলেও নাবিকের উজ্জ্বল চোখ দেখে যুবকটি আর না করতে পারেনা। লেখকের ভাষায়,

The Wedding-Guest sat on a stone:
He cannot choose but hear;
And thus spake on that ancient man,
The bright-eyed Mariner.

বৃদ্ধ নাবিক তার কোনো এক সমুদ্রযাত্রার গল্প শুরু করে। সেই যাত্রায় শুরুতে সমুদ্র ছিল শান্ত। আকাশ একদম পরিষ্কার ছিল এবং আবহাওয়া একদম অনুকূলে ছিল। হঠাৎ করে প্রকৃতি উত্তাল হয়ে ওঠে। সমুদ্রে দৈত্যাকার একটি ঝড় ওঠে, আর জাহাজটি তার পথ থেকে দক্ষিণ দিকে সরে যায়। ঝড়ের কবলে পড়ে তারা কুয়াশা আর বরফে ঢাকা সমুদ্রের মধ্যে গিয়ে আটকা পড়ে।

তখনই একটি অ্যালবাট্রোজ জাহাজের চারপাশে উড়তে শুরু করে। নাবিকরা একে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করে খুশি হয়ে ওঠে। পাখিটিকে নাবিকরা খাবার দেয়া শুরু করে, একইসাথে বরফ কেটে এগিয়ে চলে জাহাজ। কিন্তু কুয়াশা তখনো কেটে যায়নি। এর মধ্যে একদিন বৃদ্ধ নাবিকটি তার ক্রস বো দিয়ে পাখিটিকে মেরে ফেলে। প্রথমে নাবিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে এমন কান্ডের জন্য। কিন্তু পাখিটিকে মেরে ফেলার পরপরই দেখা যায় আবহাওয়া ভাল হতে শুরু করে এবং কুয়াশা কেটে যায়। এতে নাবিকরা আবার তাকে বাহবা দিতে থাকে।

Twas right, said they, such birds to slay,
That bring the fog and mist.


এরপর একদিন বাতাস থেমে যায়। জাহাজের পালে বাতাস না থাকায় সমুদ্রে আটকা পড়ে নাবিকেরা। দিনের পর দিন তারা সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়ায়। তাদের পানীয় জল শেষ হয়ে যায়। চারপাশে পানি থাকা সত্ত্বেও পান করার মতো এক ফোঁটা পানি থাকে না। লেখকের বর্ণনার এই অংশটুকু অনেকেরই চেনা।

Water, water every where,
Nor any drop to drink.


নাবিকেরা তাদের দুর্দশার জন্য অ্যালবাট্রোজের হত্যাকারীকে দায়ী করে। তাকে বার বার অভিশাপ দেয় এবং তার গলায় মৃত অ্যালবাট্রোজটি ঝুলিয়ে দেয়। এখান থেকেই ‘An albatross around your neck’ প্রবাদের উৎপত্তি।


তখন পশ্চিম দিক থেকে একটি জাহাজকে তাদের দিকে আসতে দেখা যায়। জাহাজ নিকটবর্তী হবার পর দেখা গেল তা ছিল জীবন-মৃত্যুর জাহাজ। জাহাজের মধ্যে নাবিকদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলা হচ্ছিল। খেলায় সিদ্ধান্ত হয় সকল নাবিককে মৃত্যু দেয়া হবে এবং যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করা হবে। কিন্তু পাখি হত্যাকারী বৃদ্ধ নাবিককে বাঁচিয়ে রাখা হবে। বেঁচে থাকাই হবে তার জন্য শাস্তি। একে একে জাহাজের সকলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বেঁচে থাকে শুধু সেই বৃদ্ধ নাবিক, গলায় ঝোলানো মৃত অ্যালবাট্রোজ নিয়ে। চারপাশের মৃত চোখগুলো যেন তাকে অভিশাপ দিচ্ছিল, আশেপাশে অদ্ভুত সব জীব ভেসে বেড়াচ্ছিল, দুর্বিষহ এক জীবন নিয়ে নাবিক ভেসে বেড়ায় সমুদ্রে।

এরপর একদিন জাহাজের পাশে কিছু সাপ ভেসে বেড়াতে দেখে নাবিক। কোনো অজানা কারণে সাপগুলোর প্রতি তার মনে ভালবাসা জন্মায়, এবং পাপের চিহ্ন মৃত অ্যালবাট্রোজ তার গলা থেকে খুলে পড়ে। শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে নাবিক তার জন্মভূমিতে ফিরে আসে। পাপের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে তার এই ঘটনা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালবাসার মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ করা সম্ভব- এই বাণী সকলের কাছে পৌঁছে দেয়।

প্রকৃতপক্ষে, ভাগ্যের সাথে পাখির সম্পৃক্ততা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রাচীনকাল থেকে নাবিকদের মুখে মুখে চলে আসা মিথগুলো থেকে ‘অ্যালবাট্রোজ সৌভাগ্যের প্রতীক’ এই চিন্তার উৎপত্তি। লেখক স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজের কবিতায় পাখির সাথে সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্যের সম্পর্ক ছাপিয়ে স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালবাসার বার্তাই ফুটে উঠেছে।







আলবাট্রস ব্যাকরণ

স্প্যানিশ ভাষায় এদেরকে বলা হয় অ্যালবাট্রস, এবং এটি এমন একটি নাম যা সাধারণত ডায়োমেডিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত পাখিকে চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়, তবে শব্দটি ইংরেজি শব্দ অ্যালবাট্রস থেকে এসেছে৷ পরিবর্তে, সেই ইংরেজি শব্দটি এসেছে পর্তুগিজ শব্দ আলকাট্রাজ, যা একই নামের পাখি এবং ধন্যবাদ যার জন্য বিখ্যাত উত্তর আমেরিকার কারাগারে বাপ্তিস্ম নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু উৎপত্তি সেখানেই থামে না, কারণ গ্যানেট শব্দটি এসেছে আরবি আল-ক্যাডোস বা আল-গাতাস থেকে, যার সাথে আরবরা একটি পেলিকান মনোনীত করেছিল এবং আক্ষরিক অর্থে ডুবুরি। অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ব্যাখ্যা করে যে গ্যানেট নামটি প্রাথমিকভাবে ফ্রিগেটবার্ড নামক পাখিদের জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল।

অ্যালবাট্রস শব্দটি না পৌঁছানো পর্যন্ত ভাষাগত পরিবর্তন চলতে থাকে, সম্ভবত অ্যালবাস শব্দটি ব্যবহারের ফলস্বরূপ, যেটি একটি ল্যাটিন ধর্ম যার আক্ষরিক অর্থ সাদা, এবং যা অ্যালবাট্রস এবং ফ্রিগেটবার্ডের রঙের সাথে বৈপরীত্য চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত হয়েছিল, যা কালো।








* আলবাট্রস তার প্রেমিকা/প্রেমিকা বাছায়ের ক্ষেত্রে অনেক বছর সময় নেয় এবং সঙ্গী মারা না গেলে তার সাথেই বাকি জীবন থাকে।

* এদের প্রজনন হার খুবই কম, এক প্রজনন ঋতুতে মাত্র একটি ডিম দেয় এবং সব প্রজনন ঋতুতে আবার ডিম দেয়না।

* বাচ্চাদের মুখে তুলে দেবার খাবার সংগ্রহের জন্য এরা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ উড়ে বেড়ায়। এমনকি দশ হাজার (১০,০০০) কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েও সন্তানের জন্য খাবার নিয়ে আসে।

* এদের বাচ্চারা উড়তে শেখার পর দীর্ঘদিন সাগরেই কাটয়ে দেয় এবং অনেক বছর এমনকি ৫ থেকে ৭ বছর আর ডাঙ্গায়ই আসে না।

* পৃথিবীতে বর্তমানে একুশ (২১) প্রজাতির আলবাট্রস পাখি পাওয়া যায়। উত্তর আটলান্টিক ছাড়া প্রায় সব সাগরেই এদের বিস্তার রয়েছে এবং সতের (১৭) প্রজাতিই পাওয়া যায় দক্ষিণ গোলার্ধে।


বাসস্থান এবং বিতরণ এলাকা

অ্যালবাট্রসগুলির একটি বড় অংশ দক্ষিণ গোলার্ধে বিতরণ করা হয়, এমন দূরত্বে যা অ্যান্টার্কটিকা থেকে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অবস্থানের ব্যতিক্রম চারটি প্রজাতির মধ্যে দেখা যায় যাদের আবাসস্থল হল উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর, যার মধ্যে তিনটি সেই অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি এবং হাওয়াই থেকে জাপান, ক্যালিফোর্নিয়া এবং আলাস্কায় বিতরণ করা হয়েছে।

শুধুমাত্র একটি, গ্যালাপাগোস অ্যালবাট্রস, শুধুমাত্র গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বাসা বাঁধে এবং খাওয়ার জন্য দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে পৌঁছে। যেহেতু তাদের বাতাসের প্রয়োজন হয়, যা তাদের তাদের গ্লাইডিং ফ্লাইটের জন্য প্রয়োজন, এটি বোঝায় যে তাদের বাসস্থান উচ্চ অক্ষাংশে, কারণ এই পাখিগুলি শারীরবৃত্তীয়ভাবে তাদের ডানা ঝাপটায় উড়ার জন্য ডিজাইন করা হয় না, এই কারণেই তাদের এটি করা খুব কঠিন মনে হয়। ইন্টারট্রপিকাল কনভারজেন্স জোন অতিক্রম করুন।

কিন্তু, গ্যালাপাগোস অ্যালবাট্রস প্রজাতি নিরক্ষীয় জলে, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে তার আবাসস্থল পেতে সক্ষম, হামবোল্ট স্রোত দ্বারা উত্পাদিত ঠান্ডা জল এবং এর ফলে যে বাতাস আসে তার জন্য ধন্যবাদ। সমুদ্রের বিস্তৃতি এবং মেরু অতিক্রম করে ভ্রমণ করা তাদের পক্ষে স্বাভাবিক।

উত্তর আটলান্টিকে অ্যালবাট্রস বিলুপ্ত হওয়ার আসল কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবে অনুমান করা হয় যে সমুদ্রের জলের গড় স্তর বৃদ্ধি, আন্তঃগ্লাসিয়াল উত্তাপের সময়কালের কারণে, বন্যার কারণ হতে পারে। যেখানে তারা পাওয়া গেছে তারা বারমুডা দ্বীপপুঞ্জে পাওয়া ছোট-লেজযুক্ত অ্যালবাট্রসের উপনিবেশের আবাস খুঁজে পেয়েছে।

মাঝে মাঝে, কিছু দক্ষিণ অ্যালবাট্রস প্রজাতিকে উত্তর আটলান্টিকে অনিয়মিতভাবে কাজ করতে দেখা গেছে, কয়েক দশক ধরে সেই অঞ্চলে নির্বাসিত রয়েছে। এই বিভ্রান্ত জীবন্ত নির্বাসিতদের মধ্যে একজন, যেটি ছিল কালো ভ্রুযুক্ত অ্যালবাট্রস, বেশ কয়েক বছর ধরে স্কটল্যান্ডে অবস্থিত গ্যানেটের উপনিবেশে (মোরাস বাসানাস) ফিরে এসেছিল, পুনরুত্পাদনের নিরর্থক প্রচেষ্টা করে।

একটি স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে, গবেষকদের তাদের খাবারের সন্ধানে তাদের ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ সরবরাহ করা হয়েছে, যা তারা সমুদ্র জুড়ে তৈরি করে। এটা সত্য যে তারা বার্ষিক স্থানান্তর করে না, তবে প্রজনন ঋতুর পরে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যখন দক্ষিণ গোলার্ধের প্রজাতির ক্ষেত্রে, এটি প্রমাণিত হয়েছে যে তারা মেরু অঞ্চলের মধ্য দিয়ে একাধিক ভ্রমণ করে।


আলবাট্রসরা আজ মহাবিপদেঃ

২১ টি প্রজাতির মধ্যে ১৯ টি প্রজাতিই আজ বিলুপ্তির পথে (IUCN 2010)। সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া নৌকাগুলি আলবাট্রস পাখি ব্যাপকভাবে নিধন করে চলছে। খাবারের টোপ ফেলে বড়শিতে আটকে তাদের শিকার করে চলছে। এই মানুষগুলি প্রতিবছর এক লক্ষেরও বেশী আলবাট্রস এবং আরও তিন লক্ষের বেশী অন্যান্য সামুদ্রিক পাখি হত্যা করে চলছে।

তথ্য ও ছবিঃ ইন্টারনেট