গাজা শহরে গতরাতে সত্যিকার অর্থে কী ঘটেছে তা জানা কঠিন তবে কয়েক দফায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং এরপর এলাকাটি অন্ধকারে তলিয়ে গেছে।
গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। বিদ্যুৎ, পানি ও অক্সিজেন না থাকায় হাসপাতালটি পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে। সেখানে নিও-নেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে-এনআইসিইউ ৩৯ থেকে ৪৫টি শিশু রয়েছে। যাদের মধ্যে শনিবার দুইটি শিশু মারা গেছে। বাকিদের জীবনপ্রদীপও নিভু নিভু।
বুধবার ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স বা আইডিএফ জানিয়েছে তারা আল শিফা হাসপাতালে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে কেন্দ্র করে অভিযান চালিয়েছে।
ওই অভিযানের সময় সেখানে থাকা বিবিসির একজন সংবাদদাতা কমান্ডোদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশের খবর নিশ্চিত করেছিলেন।
এরপর সৈন্যরা প্রতিটি কক্ষে গিয়ে রোগী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তরুণদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির জন্য পোশাক খুলে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়।
এর প্রায় চৌদ্দ ঘণ্টা পর সৈন্যদের সেখান থেকে প্রত্যাহারের খবর পায় বিবিসি।
এরপর বুধবার সন্ধ্যায় আইডিএফ অস্ত্রশস্ত্রের একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করে যে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ থেকে তারা এগুলো উদ্ধার করেছে। ভিডিওটি স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
ইসরায়েল বারংবার হামাসকে ওই হাসপাতালের নিচে টানেল নেটওয়ার্কে একটি কমান্ড সেন্টার পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। এ দাবিটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যও সমর্থন করছে। তবে হামাস বরাবর এটি অস্বীকার করে আসছে।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে বৃষ্টি ও ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে থাকা লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
ওদিকে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথম বারের মতো ইসরায়েল গাজা শহরে ২৫ হাজার লিটার তেল সরবরাহ করার জন্য রাফাহ অতিক্রম করার অনুমতি দিয়েছে।
এর বাইরে গত সাতই অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলার সময় যাদের জিম্মি করা হয়েছে তাদের কয়েকজনকে মুক্তির জন্য হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে কাতার মধ্যস্থতা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ‘অধিকতর মানবিক যুদ্ধবিরতি’র জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তবে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য বিরোধী দলের একটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হয়েছে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে।

আইডিএফ এ ছবি প্রকাশ করে বলেছে আল শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের স্থাপনা আছে
আল শিফা হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ মারওয়ান আবু সাদা বিবিসি আরবি বিভাগের ইথার সালাবিকে ফোনে জানিয়েছেন যে ৩৯টি নবজাতকের মধ্যে তিনটি ইতোমধ্যেই মারা গেছে।
এখন যারা বেঁচে আছে তাদের আসলে কোন অভিভাবক বেঁচে নেই কিংবা যুদ্ধের এই তাণ্ডবের মধ্যে তাদের কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না।
ইসরায়েলের গোলাবর্ষণের পর দুটি শিশুকে একেবারেই একা পাওয়া গিয়েছিলো। আর চার শিশুর জন্ম হয়েছিলো তাদের মায়েদের মৃত্যুর পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে।
তেল সংকটের কারণে শিশুগুলোকে ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে হৃদরোগ বিভাগের নবজাতক ইউনিটে রাখা হয়েছে বলে জানান মি. সাদা।
সেখানে একটি বেডে ৮/১০টি শিশুকে রাখা হয়েছে এবং তাদের উষ্ণতার জন্য ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে।
বাবার নাম জানা গেলে শিশুর হাতে ট্যাগে অমুকের ছেলে বা অমুকের মেয়ে উল্লেখ করা হচ্ছে।
পানির স্বল্পতার কারণে ডাক্তারদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডঃ সাদার আশংকা অপরিচ্ছন্ন অক্সিজেন টিউবের কারণে শিশুদের শরীরে সংক্রমণ থেকে পচন তৈরি হতে পারে।

পাঁচদিন ধরে নতুন কোন প্রিম্যাচিউর শিশুকে ভর্তি করানো যাচ্ছে না
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী একটি ভিডিও প্রকাশ করে বলেছে তারা হামাসের অস্ত্র ও অন্যান্য উপকরণ পেয়েছে।
আইডিএফ এর একজন মুখপাত্র ওই ভিডিওতে বলেছেন হামাস এই হাসপাতালকে তাদের সামরিক কাজে ব্যবহার করতো।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উপদেষ্টা মার্ক রেজেভ বিবিসিকে বলেছেন এ ধরণের আরও অনেক কিছুর বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তিনি বলেছেন আল শিফা হাসপাতালের নিচে হামাসের টানেল নেটওয়ার্কও তুলে ধরা হবে।
হাসপাতালের ভেতর থেকে করা একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর তিনি এ দাবি করেন। এতে বলা হয়েছে হামাসের অস্ত্র ও প্রযুক্তিগত নানা উপকরণ পাওয়া গেছে ওই হাসপাতালে।
তিনি হাসপাতালে অভিযানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে বলেন ‘যখন আপনার শত্রুরা হাসপাতাল বা এ ধরণের মানবিক কাজে ব্যবহৃত জায়গাগুলো ব্যবহার করছে সামরিক কাজে তখন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আপনি এসব জায়গাকে লক্ষ্য করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এসব জায়গা তখন আন্তর্জাতিক আইনে তার দায়মুক্তির সুযোগ হারায়’।
হামাস আল শিফা হাসপাতালের নিচে তাদের কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার আছে বলে ইসরায়েল যে দাবি করেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

হাসপাতালের রোগী ও কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা
নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় অধিকতর মানবিক করিডোর এবং সব জিম্মির মুক্তি আহবান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে।
পরিষদের বারটি সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিলো।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত গিলাড এরদান বলেছেন এই প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্থহীন।
তিনি বলেন ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত রাখবে এবং তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সাতই অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার বিষয়টি না থাকার তীব্র সমালোচনা করেন।
তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ শাখার ডিরেক্টর লুইস শারব্যুনো নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
“এটি ইসরায়েল, হামাস ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে শক্ত বার্তা দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে,” বলছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। এতে প্রায় বারশ মানুষ মারা যায় এবং জিম্মি করা হয় আরও অন্তত দুশো জনকে।
পরে ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় প্রায় এগার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এর মধ্যে ৪,৫০০টি শিশু।
পরিষদের বারটি সদস্য দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিলো।
জাতিসংঘে ইসরায়েলের দূত গিলাড এরদান বলেছেন এই প্রস্তাব বাস্তবতা বিবর্জিত এবং অর্থহীন।
তিনি বলেন ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া অব্যাহত রাখবে এবং তিনি নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে সাতই অক্টোবরে ইসরায়েলে হামলার বিষয়টি না থাকার তীব্র সমালোচনা করেন।
তবে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ শাখার ডিরেক্টর লুইস শারব্যুনো নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
“এটি ইসরায়েল, হামাস ও অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে শক্ত বার্তা দিয়েছে যে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনগুলোকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে,” বলছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত সাতই অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। এতে প্রায় বারশ মানুষ মারা যায় এবং জিম্মি করা হয় আরও অন্তত দুশো জনকে।
পরে ইসরায়েল গাজায় অভিযান শুরু করে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় প্রায় এগার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং এর মধ্যে ৪,৫০০টি শিশু।
0 Comments