বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। নির্বাচন কমিশন বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তফসিল প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সংবিধান অনুযায়ী সময় মতো নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

নির্বাচন কমিশন এমন এক সময়ে এ তফসিল ঘোষণা করেছে যখন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো অবরোধ কর্মসূচী পালন করছে।


বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি


তফসিল ঘোষণার পরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং করেন। এরপর তার সে লিখিত বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়।

মি. রিজভী বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যাশা, জনমত ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহবান উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনের তামাশার তফসিল ঘোষণা করেছে।

নির্বাচন কমিশন আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দেশকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে।
 বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 

"এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এই স্বৈরাচার সরকারের প্রধান দলদাস।"

আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) রাতে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

রিজভী আরও বলেন, সিলেকশন ভোটের তফসিল ঘোষণা করে জাতির সঙ্গে চরম তামাশা করেছে।

এর আগে আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
 
“প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার ভাষণে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবেন। এটা ডাহা মিথ্যা, ভন্ডামিপূর্ণ ও মেকি। শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বিশ্বাস করা চোরাবালিতে পড়ার সামিল।”

এই নির্বাচন কমিশন সব জেনে-শুনেই দেশকে এক গভীর সংকটের মধ্যে ঠেলে দিতে তফসিল ঘোষণা করেছে বলে মি. রিজভী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

মি. রিজভী তার বক্তব্যে আরও বলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।


আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

তফসিল ঘোষণার পরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেছে ।


ওবায়দুল কাদের


ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে যাচ্ছে।

“আমরা দেশের সকল ভোটারকে স্বতঃ:স্ফূর্ত-ভাবে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভোট প্রদানের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন ওবায়দুল কাদের।

আগামী ১৭ই নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতির নেতৃত্বে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে।

একই দিন শেখ হাসিনার উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে মনোনয়ন ফর্ম বিক্রিও শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।

“যে ট্রেন ছেড়ে গেল, সে ট্রেন থামানোর কোনও ক্ষমতা তাদের নেই। নির্বাচনী ট্রেন কারো জন্য অপেক্ষা করবে না। আপনি না উঠলে কি ট্রেন থেমে থাকবে?”, বলেন ওবায়দুল কাদের।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল


অন্যান্য দলের প্রতিক্রিয়া

জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে এক বিবৃতিতে নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকারি দলকে খালি মাঠে গোল করার সুযোগ দিতেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে।

ইসলামী আন্দোলনের নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম তফসিল ঘোষণার পর এক বিবৃতিতে বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা জনগণের সাথে তামাশার সামিল।

“বর্তমান নির্বাচন কমিশন আরো একটি প্রহসনের নির্বাচনের পথে হাঁটার যে ঘোষণা দিয়েছে তা জনগণ সফল হতে দিবে না,” বিবৃতিতে বলেন সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচনে তার দল অংশ নেবে।

যেসব বামপন্থী রাজনৈতিক দল সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত আছে তারাও নির্বাচনের তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গের দলগুলো – জাসদ ও ওয়াকার্স পার্টি নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে।